মহাকাশে দূরত্ব মাপার উপায় কী?

মহাকাশে দূরত্ব মাপার জন্য বিভিন্ন উপায় এবং পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। এগুলো নির্ভর করে মাপার প্রয়োজনীয়তা এবং দূরত্বের উপর। নিচে কিছু প্রধান পদ্ধতির বিবরণ দেওয়া হল:


মহাকাশে দূরত্ব মাপার উপায় কী?


১।প্যারালাক্স পদ্ধতি (Parallax Method)

   *ব্যবহার: নিকটবর্তী তারাদের দূরত্ব মাপার জন্য।

   *পদ্ধতি :  পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার সময় তারাদের অবস্থানের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করে                                    ত্রিকোণমিতির সাহায্যে দূরত্ব নির্ণয় করা হয়।

   **সীমাবদ্ধতা: এই পদ্ধতি শুধুমাত্র কাছাকাছি তারাদের জন্য কার্যকর (প্রায় কয়েক হাজার আলোকবর্ষ                          পর্যন্ত)।

 ২।সেফেইড ভেরিয়েবল তারকা (Cepheid Variable Stars)

    **ব্যবহার: দূরবর্তী গ্যালাক্সির দূরত্ব মাপার জন্য।

    **পদ্ধতি : সেফেইড ভেরিয়েবল তারকাগুলোর উজ্জ্বলতা পর্যায়ক্রমে পরিবর্তিত হয়।এই উজ্জ্বলতার                       পরিবর্তনের সময়কাল এবং প্রকৃত উজ্জ্বলতার সম্পর্ক ব্যবহার করে দূরত্ব নির্ণয় করা হয়।            **সীমাবদ্ধতা : এই পদ্ধতি মাঝারি দূরত্বের জন্য কার্যকর (প্রায় কয়েক মিলিয়ন আলোকবর্ষ পর্যন্ত)।

 ৩।টাইপ Ia সুপারনোভা (Type Ia Supernova)

     **ব্যবহার : অত্যন্ত দূরবর্তী গ্যালাক্সির দূরত্ব মাপার জন্য।

     **পদ্ধতি : টাইপ Ia সুপারনোভাগুলো একটি নির্দিষ্ট উজ্জ্বলতা পায়, যা তাদের প্রকৃত উজ্জ্বলতা হিসাবে                     বিবেচনা করা হয়।  পর্যবেক্ষিত উজ্জ্বলতা এবং প্রকৃত উজ্জ্বলতার তুলনা করে দূরত্ব নির্ণয়                          করা হয়।

    **সীমাবদ্ধতা**: এই পদ্ধতি অত্যন্ত দূরবর্তী বস্তুর জন্য কার্যকর (বিলিয়ন আলোকবর্ষ পর্যন্ত)।

৪। (Redshift) ব্যবহার: অত্যন্ত দূরবর্তী গ্যালাক্সি এবং কুয়াসারদের দূরত্ব মাপার জন্য।

    **পদ্ধতি : মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের কারণে দূরবর্তী গ্যালাক্সি থেকে আসা আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায়,                     যাকে রেডশিফ্ট বলে।  এই রেডশিফ্টের পরিমাণ ব্যবহার করে দূরত্ব নির্ণয় করা হয়।

    **সীমাবদ্ধতা: এই পদ্ধতি অত্যন্ত দূরবর্তী বস্তুর জন্য কার্যকর, কিন্তু নিকটবর্তী বস্তুর জন্য কম নির্ভুল।

৫।মেইন সিকোয়েন্স ফিটিং (Main Sequence Fitting)

    **ব্যবহার : তারকা গুচ্ছের দূরত্ব মাপার জন্য।

    **পদ্ধতি : তারকা গুচ্ছের তারকাগুলোর উজ্জ্বলতা এবং তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করে তাদেরকে মেইন                           সিকোয়েন্সের সাথে মিলিয়ে দূরত্ব নির্ণয় করা হয়।

   **সীমাবদ্ধতা : এই পদ্ধতি শুধুমাত্র তারকা গুচ্ছের জন্য কার্যকর।

৬।টুলি-ফিশার সম্পর্ক (Tully-Fisher Relation)

    **ব্যবহার : স্পাইরাল গ্যালাক্সির দূরত্ব মাপার জন্য।

    **পদ্ধতি : গ্যালাক্সির ঘূর্ণন বেগ এবং এর উজ্জ্বলতার মধ্যে সম্পর্ক ব্যবহার করে দূরত্ব নির্ণয় করা হয়।      **সীমাবদ্ধতা: এই পদ্ধতি শুধুমাত্র স্পাইরাল গ্যালাক্সির জন্য কার্যকর।

৭।সূর্যের উজ্জ্বলতা এবং আকার ব্যবহার করে (Solar Luminosity and Size)

    **ব্যবহার**: সৌরজগতের বস্তুর দূরত্ব মাপার জন্য।

    **পদ্ধতি**: সূর্যের উজ্জ্বলতা এবং আকার ব্যবহার করে সৌরজগতের বস্তুর দূরত্ব নির্ণয় করা হয়।

এই পদ্ধতিগুলো বিভিন্ন দূরত্বের জন্য বিভিন্ন মাত্রার নির্ভুলতা প্রদান করে।  মহাকাশে দূরত্ব মাপার জন্য এই পদ্ধতিগুলো একত্রে ব্যবহার করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের বৃহত্তর চিত্র উপলব্ধি করতে পারেন।

Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url