একমাত্র পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কেন?
প্রতীক ছবি। |
ওয়েস্টার্ন ডেটা সায়েন্স: পৃথিবী হচ্ছে সৌরজগতের একমাত্র অনন্য গ্রহ, যেখানে জীবন তার সকল রূপেই বিদ্যমান। জীবাণু থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণী মানুষ সহ প্রাণের সকল অস্তিত্বই এখানে বিদ্যমান। পৃথিবীতে প্রাণের সাবলীল অস্তিত্বের অনেক কারণ রয়েছে।
যে ৫ কারণে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব
প্রাণ বলতে আমরা যা বুঝি অর্থাৎ হাইড্রোজেন ও কার্বনের মিশ্রণে তৈরি জৈবযৌগ এর জন্য সবচেয়ে অনুকূল পরিবেশ এই পৃথিবীতেই রয়েছে। এর অবস্থান সূর্য থেকে এমন দূরত্বে যেখানে খুব গরম বা ঠাণ্ডা নেই। সবচেয়ে বড়ো কথা হল তরল পানি রয়েছে, আমাদের শ্বসনের জন্য অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইড রয়েছে, বায়ুমণ্ডল রয়েছে, চৌম্বকক্ষেত্র রয়েছে যা সূর্যের বিকিরণ থেকে আমাদের রক্ষা করে। যথেষ্ট স্থলভাগ রয়েছে এবং সেখানে আমরা খাবার ফলাতে পারি।
এদিকে অন্যান্য গ্রহগুলোর অবস্থা আমাদের জন্য চরম। বুধ, শুক্র অত্যন্ত উত্তপ্ত এবং এর বাতাস শ্বাসের উপযোগী নয় মঙ্গল তুলনামূলক আমাদের পৃথিবীর মতোই প্রায় তবে এর বায়ুমণ্ডল অনেক পাতলা এবং অক্সিজেন এর মাত্রা অতি নগণ্য। এরপরের গ্রহগুলো বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন গ্যাসীয় কিংবা বরফের আচ্ছাদনে ঢাকা। এখানকার অভিকর্ষ বল তাপমাত্রা ও চাপ আমাদের সহনশীলতার ঊর্ধ্বে! কয়েকটি গ্রহে তো প্রচণ্ড চাপ ও তাপের ফলে হিরার বৃষ্টি হয়।
তবে আমরা এখনও নিশ্চিত না যে হাইড্রোকার্বন ছাড়াও প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে কিনা। এবং ওইসব গ্রহ সম্পর্কে আমরা এখনও খুব বেশি জানিনা। হতেও পারে ওইসব গ্রহের প্রাণের ধরণ আলাদা, যারা ওই চরম পরিস্থিতিতেই বেঁচে থাকতে অভ্যস্ত!
১। বায়ুমণ্ডল:
পৃথিবীতে রয়েছে শ্বাস নেওয়ার উপযোগী একটি বায়ুমণ্ডল। এখানে উপস্থিত অক্সিজেন অধিকাংশ জীবের প্রাণধারণের জন্য অপরিহার্য। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ছাড়াও জলেও অক্সিজেনের উপস্থিতি পাওয়া যায়। উদ্ভিদ প্রভৃতির মাধ্যমে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন সরবরাহিত হয়ে থাকে।অক্সিজেন ছাড়াও পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে সামান্য পরিমাণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড রয়েছে। এটা একটা বিষাক্ত গ্যাস। শুক্র ও মঙ্গলের মতো গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডল গঠনে এই গ্যাসের ভূমিকা রয়েছে।
কিন্তু আমরা জানি, এই গ্যাস জীবনধারণের জন্য পরিপূরক নয়। যা হোক, উদ্ভিদের তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা ও কিছু অন্যান্য কারণে সামান্য মাত্রায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে রয়েছে। বুধ ও মঙ্গল গ্রহ এতোই ছোট যে, এগুলো কোনো বায়ুমন্ডল ধারণ করতে পারে না। ফলে বুধ গ্রহে কোনো বায়ুমণ্ডল নেই। আর মঙ্গলের বায়ুমণ্ড খুবই পাতলা। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল যথেষ্ট ভারি। ফলে এটা মহাবিশ্বের নানা ক্ষতিকর রশ্মি থেকে পৃথিবী ও প্রাণকে রক্ষা করে থাকে। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এর বায়ুমণ্ডলকে ধরে রাখে।মোট কথা, প্রাণ ধারণের জন্য উপযোগী বায়ুমণ্ডল আমাদের পৃথিবীর রয়েছে।
২। জলবায়ু:
পৃথিবীর রয়েছে প্রাণধারণের উপযুক্ত জলবায়ু। উদ্ভিদের কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ, কখনো কখনো সংঘটিত হওয়া অগ্নুৎপাত পৃথিবীর তাপমাত্রাকে কখনোই চরমসীমায় পৌছুতে দেয় না।পৃথিবীর তাপমাত্রা প্রাণধারনের জন্য যথেষ্ট সহনীয় হয়ে থাকে। যেখানে সৌরজগতের অনেক গ্রহ এখনো যথেষ্ট উত্তপ্ত এবং কোনো গ্রহ প্রচণ্ডরকমের শীতল।
আরও পড়ুন: কসমিক কিহোল কি! এর রহস্যময় ছবি তুলল হাবল স্পেস টেলিস্কোপ
৩। পানি:
পানিতে উপস্থিত কিছু রাসায়নিক পদার্থ জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। তাছাড়া আমরা বিশ্বাস করি যে, জীবনের অপর নামই পানি। এই পানির উপস্থিতি পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব বজায় রাখতে যথেষ্ট সাহায্য করে। পানি তার তিন অবস্থাতেই এই পৃথিবীতে বিদ্যমান। এটা পান করা যায় এবং দৈনন্দিন সকল কাজে নিশ্চিন্তে ব্যবহা করা যায়। পানির উপস্থিতিই পৃথিবীকে করে তুলেছে প্রাণধারণের উপযুক্ত।
৪। আলো:
সকল গ্রহই সূর্য থেকে আলো গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু পৃথিবীর মতো সেই আলোকে অন্য কোনো গ্রহ কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে না। উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অক্সিজেন উৎপাদন করে তা বায়ুমণ্ডলে ছেড়ে দেয়। অক্সিজেন উৎপাদন ও বেড়ে ওঠার জন্য উদ্ভিদের সূর্যালোকের খুব প্রয়োজন। তাই পৃথিবীতে পরিমিত সূর্যালোকের উপস্থিতিই এখানে প্রাণধারণের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করেছে। আর পৃথিবী তার অবস্থানগত কারণেই এমন আলো পেয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: ভিন্গ্রহে কি তবে প্রাণের চিহ্ন?
৫। সূর্য:
উপরে বর্ণিত পৃথিবীতে প্রাণধারণের উপযুক্ত কারণগুলির মূলে রয়েছে মূলত সূর্য। সূর্য থেকে পৃথিবীর আদর্শ দূরত্ব পৃথিবীকে করে তুলেছে প্রাণধারণের জন্য বৈচিত্র্যময় একটি গ্রহে। নিজ অক্ষে পৃথিবী যে সময়ে আবর্তিত হয় আর যে সময়ে পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, সে সুষম সময়ের কারণে পৃথিবীর সকল অংশ পর্যাপ্ত পরিমাণে সূযালোক পেয়ে থাকে। সূর্যের উপস্থিতি ছাড়া পৃথিবীতে প্রাণধারণ কোনোভাবেই কল্পনা করা সম্ভব না। সূত্র: বব দ্য এলিয়েন।