বর্তমানে বামন গ্রহের সংখ্যা কয়টি?
পাঁচটি বামন গ্রহের ছবি। |
বামন গ্রহের সংখ্যা কয়টি
বামন গ্রহের আদি নিদর্শন হল প্লুটো।গ্রহ ভূতত্ত্ববিদদের কাছে বামন গ্রহ সম্পর্কে আগ্রের বিষয়টি হল এই যে, সম্ভবত পার্থক্যীকৃত ও ভূতাত্ত্বিকভাবে সক্রিয় বস্তু এই বামন গ্রহগুলিতে গ্রহীয় ভূতত্ত্বের বৈশিষ্ট্যগুলি পরিস্ফুট হলেও হতে পারে। ২০১৫ সালে প্লুটোয় নিউ হোরাইজনস অভিযানের মাধ্যমে এমন প্রত্যাশারই জন্ম হয়েছে।গ্রহ নয় কারণ এগুলো কোনো সাধারণ গ্রহ থেকেই আকারে ছোট। আবার উপগ্রহও নয় কারণ এগুলো কোনো গ্রহকে কেন্দ্র করে ঘোরে না। এগুলোকেই বলা হয় বামন গ্রহ। এ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা সৌরজগতে মোট পাঁচটি বামন গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন। পাঁচটি বামন গ্রহের এর মধ্যে প্লুটোর সবচেয়ে পরিচিত। বাকি চারটি হলো :সেরেস, এরিস, মাকেমাকে ও হাউমেয়া।
১। প্লুটো : প্লুটো আবিষ্কৃত হয় ১৯৩০ সালে। বিজ্ঞানী ক্লাইড ডব্লিউ টমবাউ এটি আবিষ্কার করেন। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে এর সময় লাগে পৃথিবীর হিসাবে ২৪৮ বছর। সূর্য থেকে প্লুটোর গড় দূরত্ব প্রায় ৬০০ কোটি কিলোমিটার। কক্ষপথে প্লুটোর গতি মাত্র ৪.৭ কিলোমিটার। এর ব্যাস ২,৩৭৬.৬ কিলোমিটার। প্লুটোতে প্রচুর পরিমাণে মিথেন গ্যাস রয়েছে। বস্তুপিন্ডটিকে রোমান মৃত্যু দেবতার নামে নামকরণ করা হয়। প্লুটোর মোট পাঁচটি উপগ্রহ আছে। শ্যারন, নিক্স, হাইড্রা, কার্বেরস ও স্টিক্স।
২। সেরেস: সেরেস সৌরজগতের সবচেয়ে ছোট এবং গ্রহাণু বলয়ের একমাত্র বামন গ্রহ। ইতালীয় জ্যোতির্বিদ জিওসেপ্পে পিয়াজ্জি ১৮০১ সালে এটি আবিষ্কার করেন। তিনি এর নাম রাখেন সেরেস ফেরদিনানদিয়া। সেরেস নামের উৎস হচ্ছেন রোমান দেবী সেরেস যিনি অঙ্কুরোদগম ফসল ফলানো ও স্নেহের দেবী। মাত্র ৯৫০ কিলোমিটার ব্যাসের সেরেস গ্রহাণুপুঞ্জের সবচেয়ে বড় জ্যোতিষ্ক। গ্রহাণুপুঞ্জের সকল গ্রহাণুর মোট ভরের প্রায় এক তৃতীয়াংশ ভর সেরেসের একারই। সাম্প্রতিক কিছু পর্যবেক্ষণ থেকে জানা যায় যে, সেরেসের পৃষ্ঠ সম্ভবত পানি, বরফ ও পানিতে দ্রবীভূত বিভিন্ন খনিজ পদার্থের মিশ্রণ দিয়ে তৈরি। এর কেন্দ্র পাথুরে এবং চারপাশ ঘিরে তরল পানির মহাসাগর রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
৩। এরিস: এরিস হলো সৌরজগতের সবচেয়ে ভারী এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম বামন গ্রহ। মাইকেল ই. ব্রাউনের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের পালোমার অবজারভেটরির একটি দল ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে এরিস বামন গ্রহ আবিষ্কার করে। আবিষ্কারটি পরের বছরেই যাচাই করা হয়। এর ভর পৃথিবীর ভরের ০.২৭ শতাংশ এবং বামন গ্রহ প্লুটোর চেয়ে ২৭ শতাংশ বেশি। তবে যদিও প্লুটো আয়তনে এর চেয়ে কিছুটা বড়।
৪। মাকেমাকে: ২০০৫ সালে মাইকেল ই. ব্রাউনের নেতৃত্বে একটি দল মাকেমাকে আবিষ্কার করেন। প্রাথমিকভাবে এর নাম ছিল ২০০৫ এফওয়াই৯। ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সংঘ এই বস্তুকে বামন গ্রহ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ইস্টার দ্বীপের বাসিন্দা রাপা নুইদের পৌরণিক দেবতা মাকেমাকের নাম অনুসারে এই গ্রহের নামকরণ করা হয়। মাকেমাকে কুইপার বেল্টের স্থায়ী সদস্যদের মধ্যে বৃহত্তম বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। এর ব্যাস প্লুটো গ্রহের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ। মাকেমাকের কোনো উপগ্রহ পাওয়া যায়নি। তাই নিখুঁত ভর জানা সম্ভব হয়নি। এর গড় তাপমাত্রা, প্রায় -২৪৩.২ °সেলসিয়াস। এর পৃষ্ঠ মিথেন, ইথেন ও সম্ভবত নাইট্রোজেনের বরফে আবৃত বলে ধারণা করা হয়।
আরও পড়ুন: গ্যানিমিড কোন গ্রহের উপগ্রহ
৫।হাউমেয়া: ২০০৮ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদ ইউনিয়ন আইএইউ সৌরজগতের পঞ্চম বামন গ্রহটির নামকরণ করে। হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পৌরাণিক দদেবী হাউমেইয়ার নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়। গ্রহটির দুটি উপগ্রহের নামকরণ করা হয় দেবী হাউমেইয়ার দুই কন্যার নামানুসারে- হিইয়াকা ও নামাকার নামে।
আরও পড়ুন: প্লুটোর আসল ছবি শেয়ার করল নাসা, সত্যিকারে বামন গ্রহের রং কেমন?