শনি গ্রহের উপগ্রহ কয়টি?

শনি গ্রহের উপগ্রহ কয়টি
 শনি গ্রহের উপগ্রহ অন্তত ৮২ টি ২৯ টির নামকরণ করা হয় নি প্রতীকী ছবি।


শনি গ্রহের পরিচয়

শনি ইংরেজি নাম হল (Saturn; স্যাটার্ন) সূর্য থেকে দূরত্বের নিরিখে ষষ্ঠ গ্রহ এবং বৃহস্পতির পরই সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহ। এটি একটি গ্যাসীয় দৈত্য যার ব্যাসার্ধ পৃথিবীর ব্যাসার্ধের প্রায় নয় গুণ।শনি গ্রহের গড় ঘনত্ব অবশ্য পৃথিবীর গড় ঘনত্বের এক অষ্টমাংশ। কিন্তু এই গ্রহের বৃহত্তর আয়তনের জন্য এটি পৃথিবীর তুলনায় ৯৫ গুণ বেশি ভারী। শনির অভ্যন্তরীণ অংশটি সম্ভবত লোহা নিকেলের একটি কেন্দ্রস্থল ও পাথর (সিলিকন ও অক্সিজেন যৌগ) দ্বারা গঠিত। এই কেন্দ্রস্থলটিকে ঘিরে রয়েছে ধাতব হাইড্রোজেনের একটি গভীর স্তর । তরল হাইড্রোজেন ও তরল হিলিয়ামের একটি মধ্যবর্তী স্তর এবং সর্বোপরি একটি গ্যাসীয় বহিঃস্তর। 

বায়ুমণ্ডলের উপরিতলে অ্যামোনিয়া কেলাসের উপস্থিতির জন্য শনি গ্রহের রং একটি ফিকে হলুদ। ধাতব হাইড্রোজেনের মধ্যে প্রবহমান তড়িৎ প্রবাহটিকে শনির গ্রহগত চৌম্বক ক্ষেত্রের উৎস মনে করা হয়। এই চৌম্বক ক্ষেত্রটি পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের তুলনায় দুর্বল হলেও শনির বৃহত্তর আকারের জন্য এটির চৌম্বক মুহুর্ত পৃথিবীর তুলনায় ৫৮০ গুণ বেশি। শনির চৌম্বক ক্ষেত্রের শক্তি বৃহস্পতির কুড়িভাগের প্রায় একভাগ।গ্রহের বহিঃস্থ বায়ুমণ্ডল সাধারণভাবে বৈশিষ্ট্যহীন ও বৈচিত্র্যহীন। যদিও কিছু দীর্ঘস্থায়ী বৈশিষ্ট্যেরও উদ্ভব ঘটে থাকে। শনি গ্রহে বায়ুপ্রবাহের গতি ১,৮০০ কিমি/ঘ (১,১০০ মা/ঘ; ৫০০ মি/সে) পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। যা বৃহস্পতির বায়ুপ্রবাহের গতির থেকে বেশি হলেও নেপচুনের বায়ুপ্রভাবের গতির মতো অধিক মাত্রার নয়।

শনি গ্রহের বৈশিষ্ট্য 

শনির সবচেয়ে বিখ্যাত বৈশিষ্ট্য হল এই গ্রহের সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান বলয় ব্যবস্থা। মূলত বরফ কণা দিয়ে গঠিত এই বলয়গুলিতে তুলনামূলকভাবে অল্প পরিমাণে পাথুরে ভগ্নাবশেষ ও ধূলিও রয়েছে। অন্তত ৮২ টি। এর মধ্যে ২৯ টির নামকরণ করা হয় নি। কিন্তু নামকরণ করার চেষ্টা চলছে। প্রাকৃতিক উপগ্রহের দিক থেকে শনি বৃহস্পতিকে পিছে ফেলে প্রথম স্থান দখল করে আছে। প্রাকৃতিক উপগ্রহ শনির চারপাশে আবর্তন করছে। এগুলির মধ্যে ৫৩টির আনুষ্ঠানিক নামকরণ হয়েছে। তবে শনির বলয়ের মধ্যে অবস্থিত শতাধিক অনু উপগ্রহগুলিকে এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। শনির বৃহত্তম প্রাকৃতিক উপগ্রহ টাইটান হল সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক উপগ্রহ। এটি আকারে বুধ গ্রহের চেয়েও বড়ো। যদিও টাইটানের ভর বুধের ভরের চেয়ে কম। টাইটানই সৌরজগতের একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ যেখানে একটি উল্লেখযোগ্য বায়ুমণ্ডল রয়েছে।

শনির উপগ্রহ

মূলত শনি গ্রহের রয়েছে ৮২ টি উপগ্রহ।কিন্তু এর মধ্যে নাম দেয়া হয়েছে মাত্র ৫৫ টি উপগ্রহের । এবং আকার বিবেচনায় ২৯ টি উপ গ্রহ কে মূল উপগ্রহ ধরা হয় ।শনি গ্রহের টাইটান উপগ্রহটি সবচেয়ে বড়। পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের সাথে তুলনা করলে এটির ব্যাসে প্রায় ১৪৮% বড়। নিম্নে উপগ্রহগুলোর বিবরণ দেয়া হলোঃ- 

১। প্যান (Pan)       

২। প্যান্ডোরা (Pandora)  

৩। মিমাস (Mimas)

৪। টাইটান (Titan)  

৫। অ্যান্সেলাডাস (Enceladus) 

৬। প্যালেন (Pallene)

৭। রিয়া (Rhea)

৮। টেথিস (Tethys)

৯। অ্যাপেটাস (Lapetus)

১০। ডিওন (Dione)

১১। ক্যালিপ্সো (Calypso)

১২। জ্যানাস (Janus)

১৩। টেলেস্টো (Telesto)

১৪। ফোবে (Phoebe)

১৫। প্রমিথিউস (Prometheus)

১৬। ড্যাফনিস (Daphnis)

১৭। অ্যাপিমিথিউস (Epimetheus)

১৮। স্কোল (Skoll)

১৯। স্কাথী (Skathi)

২০। হাইপেরিয়োন (Hyperion)

২১। পলিডিউসেস (Polydeuces)

২২। হাতী (Hati)

২৩। কিভিউক (Kiviuq)

২৪। অ্যাল্বাইয়োরিক্স (Albiorix)

২৫। মেথোন (Methone)

২৬। পালিয়াক (Paaliaq)

২৭। বেভিওন (Bebhionn)

২৮। অ্যারিয়াপাস (Erriapus)

২৯। হাইরোকীন (Hyrrokkin)

৩০। গ্রোয়িপ (Greip)

৩১। জারন্সাক্সা (Jarnsaxa)

৩২। নার্ভি (Narvi)

৩৩।র্টাভোস (Tarvos)

৩৪। মান্ডিল্ফারী (Mundilfari)

৩৫। তার্কেক (Tarqeq)

৩৬। সিয়ার্নাক (Siarnaq)

৩৭। বার্গেলমীর (Bergelmir)

৩৮। ইজিরাক (Ijiraq)

৩৯। অ্যাগিয়ন (Aegaeon)

৪০।অ্যান্থ (Anthe)

৪১। ইমীর (Ymir)

৪২। ফেন্রির (Fenrir)

৪৩। সার্টার (Surtur)

৪৪। কারী (Kari)

৪৫ । লোগে (Loge)

৪৬। বেস্টলা (Bestla)

৪৭। ফোর্নজোট (Fonjot)

৪৮। সুটাংগার (Sutuger)

৪৯। ফারবাউটি (Farbaurt)

৫০। থ্রাইম্র (Thrymr)

৫১। অ্যাজির (Aegir)

৫২। ক্রোনাস (Cronus)

৫৩। এস/২০০৭ এস ২(S/2007 S 2)

৫৪। এস/২০০৬ এস ১(S/2006 S 1)

৫৫। এস/২০০৪ এস ১৭(S/2004 S 17)

আরও পড়ুন: হলুদ গ্রহ কাকে বলা হয়?

আরও পড়ুন: নিশ্বাসে বিষ! পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত প্রথম বাংলাদেশ


শনি গ্রহের উপগ্রহ কয়টি ও কি কি
 শনি গ্রহ ও তার বলয় ছবি।


শনির বলয়

শনি গ্রহটি তার আকর্ষণীয় বলয়ের কারণেই সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহের তুলনায় সৌন্দর্য্যের উৎকর্ষে রয়েছে। যা মহাজাগতিক ক্যানভাসে সৃষ্টি করেছে এক বিমূর্ত চিত্র। ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি সর্বপ্রথম টেলিস্কোপের মাধ্যমে শনি গ্রহকে পর্যবেক্ষণ করেন এবং এর দৃষ্টিনন্দন বলয় দেখতে পান। নাসার বিজ্ঞানীরা সৌরজগতের বিশাল গ্রহ শনির চারপাশে ঘূর্ণায়মান বিশাল আকারের নতুন একটি বলয় (রিং)-এর সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা । দীর্ঘদিন অনেক চেষ্টার পর বিজ্ঞানীরা এটি আবিষ্কারে সফল হন। আসল ব্যাপার হলো সদ্য আবিষ্কৃত বলয়টি এতটাই বিশাল যে, এর ভেতর একশ কোটি বা এক বিলিয়ন পৃথিবী ভরে রাখার যাবে। বলয়টির মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বরফ, ধুলাবালি ইত্যাদি ধরা পড়ে।বলয় নিয়ে সবচেয়ে আকর্ষনীয় বিষয় হলো শনির আসলে একটি বলয় না কয়েক হাজার বলয় রয়েছে যা এতকাল মানুষ জানতো না। কিছুদিন আগে তা আবিষ্কার করা হয়েছে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url