যুক্তরাষ্ট্রের নাসা কর্তৃক মঙ্গল গ্রহে পাঠানো মহাকাশ যানের নাম

যুক্তরাষ্ট্রের নাসা কর্তৃক মঙ্গল গ্রহে পাঠানো মহাকাশ যানের নাম
কিউরিওসিটি রোভার ২০১২ খ্রিস্টাব্দে মঙ্গল গ্রহে নাসার প্রেরিত চতুর্থ রোবটযান ছবি।


হ্যালো বন্ধুরা,কিউরিওসিটি রোভার ২০১২ খ্রিস্টাব্দে মঙ্গল গ্রহে নাসার প্রেরিত চতুর্থ রোবটযান। মঙ্গল গবেষণার ইতিহাসে এটিই এখন পর্যন্ত ২০১২ নাসার বিজ্ঞানীদের সবচেয়ে বড় সাফল্য। রোবটযানটির ওজন প্রায় ১ টন। এই প্রথম নাসা এত বেশি ওজনের যান কোনো গ্রহে সফলভাবে নামাতে সক্ষম হয়েছে। মিশনের বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, মঙ্গল গ্রহে এপর্যন্ত যত অনুসন্ধানী যান পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে ১ টন ওজনের এই কিউরিওসিটিই সবচেয়ে উন্নত। কিউরিওসিটি গ্রিনিচ মান সময় সোমবার ভোর পাঁচটা ৩২ মিনিটে মঙ্গল গ্রহের একটি পর্বতের জ্বালামুখের ভেতরে নামে। এবং পরে মঙ্গলের মাটি স্পর্শ করে। কিউরিওসিটি পৃথিবী থেকে মঙ্গল গ্রহে পৌঁছাতে সময় নিয়েছে নয় মাস। এটি ২০১১ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল থেকে যাত্রা শুরু করে। এবং ৫৭ কোটি কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মঙ্গল গ্রহে পৌঁছায়। এ রোবটকে বলা হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ জৈব গবেষণাগার।

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

মঙ্গল নামে লোহিত গ্রহটির বিশাল আকৃতির আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ গেইলের ভূতত্ত্ব সম্পর্কে জানা। রোবটটি এর লেজার ব্যবহার করে সেখানকার শিলাখণ্ড ছিদ্র বা দহন করে এ গ্রহের প্রাচীন আবহাওয়া ও জলবায়ু জানার চেষ্টা করবে। এতে জানা যাবে যে, মঙ্গল কখনো আনুবীক্ষণিক জীব বসবাসের উপযোগী ছিল কি না এবং এখন সেখানে জীবনধারণের মতো পরিবেশ আছে কি না বা ভবিষ্যতে সে অবস্থা তৈরির সম্ভাবনা আছে কি না।  এক কথায় এই যে, প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি কিলোমিটার পেরিয়ে মঙ্গলে সফল অবতরণ করা রোভার কিউরিওসিটির মিশনের উদ্দেশ্য মঙ্গলের আবহাওয়া ও প্রাণের অস্তিত্ব অনুসন্ধান। এই যানটি বানাতে সর্বমোট খরচ হয়েছে প্রায় ২৬০ কোটি মার্কিন ডলার।

যন্ত্রপাতি

একটি ছোট গাড়ির আকারের কিউরিওসিটিতে আছে হরেক রকম বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ক্যামেরা আর আবহাওয়া কেন্দ্র। রোভার যানটির আছে একটি শক্তিশালী ড্রিলসহ রোবটিক হাত। দূর থেকে পাথর চূর্ণ বিচুর্ণ করতে পারা লেজার। একটি রাসায়নিক গবেষণাগার আর বিকিরণ মাপার ডিটেক্টর।

কেমক্যাম: একটি সংবেদনশীল যন্ত্রে যার সাহায্যে সাত মিটার দূরের কোনো শিলার উপরিস্তর বাষ্পায়িত করতে সক্ষম। এ যন্ত্র বাষ্পায়িত শিলা বিশ্লেষণ এবং এর মধ্যকার খনিজ উপাদান শনাক্ত করতে পারবে। ভিনগ্রহে পাঠানো কোনো যানে ।এই প্রথম এমন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন লেজার সংযোজন করা হয়েছে। এতে আরো কয়েকটি ক্যামেরা সংযুক্ত আছে যারা মঙ্গলের বৈচিত্রময় ভূপ্রকৃতির উচ্চমানের ছবি তুলে পৃথিবীতে পাঠাবে। অন্য যন্ত্রপাতিগুলো মঙ্গলের আবহাওয়ার অবস্থা পরীক্ষা করবে।

স্পেক্টোমিটার: একসেট যা মঙ্গলের মাটি পরীক্ষা করে দেখবে এতে কোনো জৈব পদার্থের অস্তিত্ব রয়েছে কি না। এছাড়া মঙ্গলপৃষ্ঠের ঠিক নিচের স্তরেই জলেরর বরফের অস্তিত্বও খুঁজবে কিউরিওসিটি।


কিউরিসিটি মহাকাশযান কোন গ্রহে পাঠানো হয়
মঙ্গলের প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে যন্ত্রপাতি পরীক্ষায় সময় কেটেছে কিউরিওসিটির ছবি।

মঙ্গলে কিউরিওসিটির কাজ

মঙ্গলের প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে যন্ত্রপাতি পরীক্ষায় সময় কেটেছে কিউরিওসিটির। তৃতীয় দিনে ক্যামেরা চালু করে ছবি তুলে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে কিউরিওসিটি। প্রথম দিন মঙ্গলের তেজস্ক্রিয়া মাপতে আর যন্ত্রপাতি ঠিকঠাক কাজ করছে কি না।তা পরীক্ষা করে দেখেতে সময় কেটেছে কিউরিওসিটির। মঙ্গলের দ্বিতীয় দিনে এ পরীক্ষার অংশ হিসেবেই কিউরিওসিটি মাস্তুল খাড়া করেছে। এ মাস্তুলের সঙ্গে লাগানো ক্যামেরা ব্যবহার করে তৃতীয় দিনে মঙ্গলের নিসর্গের রঙিন ছবি তুলেছে কিউরিওসিটি। এ ছবি তুলতে ৩৪ মিলিমিটার ক্যামেরা ব্যবহার করেছে কিউরিওসিটি। চলার পথে পাথর ভেঙে আর মাটি বিশ্লেষণ করে অণুজীবের সন্ধান চালাবে। কিউরিওসিটির মাস্তুলে ৩৪ মিলিমিটার ক্যামেরাটির পাশে রয়েছে আরেকটি ১০০ মিলিমিটার টেলিফটো লেন্সের ক্যামেরা। দুটি ক্যামেরা মিলিয়ে উন্নত মানের ছবি তুলতে পারে। মঙ্গলে কিউরিওসিটির চতুর্থ দিন সফটওয়্যার ও ধুলা বিশ্লেষক যন্ত্রগুলো ঠিকঠাক কাজ করছে কি না, তা পরীক্ষায় পার হবে।

আরও পড়ুন: এবার মঙ্গলে ফুল ফোটাল নাসার রোভার

আরও পড়ুন: ভারত, আমেরিকা বা ইউরোপে মহাকাশ স্টেশন ভেঙে পড়তে পারে: হুমকি রাশিয়ার

মঙ্গলে জলের অস্তিত্ব

মঙ্গলগ্রহে জলের অস্তিত্বের প্রমাণ খুঁজে পেয়েছে কিউরিওসিটি। নাসার তরফে দাবি করা হয়েছে যে, কিউরিওসিটি মঙ্গলগ্রহের যেখানে অবতরণ করেছে সেই এলাকা দিয়ে একসময় বয়ে যেত জলের ধারা। মঙ্গলের ক্রেটার গহ্বরে অবতরণ করে কিউরিওসিটি। ক্রেটারের উত্তরদিকে মাউন্ট শার্প এলাকায় একটি পাথরের খণ্ডের ছবি পৃথিবীতে পৌঁছনোর পরেই উত্তেজিত হয়ে পড়েছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি যে, ওই পাথরখণ্ডের আকার ও স্তরবিন্যাস স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে। তার ওপর দিয়ে একসময় জলের ধারা বয়ে যেত। সেই পাথরখণ্ডের ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে নাসার তরফে। প্রাথমিকভাবে বিজ্ঞানীদের অনুমান হাঁটু গভীরতার জলের ধারা বইত ওই পাথরের ওপর দিয়ে। তবে পাথরটির রাসায়নিক বিশ্লেষণ এখনও করা বাকি। নাসার বিজ্ঞানী জানিয়েছেন যে, পাথরখণ্ডগুলি আকারে গোলাকার। একটি আকারে বেশ বড়। তাই বাতাসে স্থানচ্যূত হওয়ার আশঙ্কা নেই। যা দেখে বিজ্ঞানীদের সিদ্ধান্ত এগুলির আকার জলস্রোতের ফলেই এমন হয়েছে।

ধন্যবাদ বন্ধুরা 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url