৫৮০ বছরে দীর্ঘতম খণ্ডগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ শুক্রবার, দেখা যাবে না আর এই শতাব্দীতে । Longest Lunar Eclipse
খণ্ডগ্রাসে এমনটাই দেখতে হবে ব্লাড মুন |
এতটা সময় ধরে দেখা যায়নি গত ছয় শতাব্দীতেও । এতটা সময় ধরে আর দেখা যাবে না এই শতাব্দীতে । সময়ের নিরিখে সেই প্রায় বিরলতম চন্দ্রগ্রহণ হবে শুক্রবার । মানে আগামীকাল ৯ নভেম্বর ২০২১ পূর্ণিমা দিনে । খণ্ডগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ ।দেখা যাবে টানা তিন ঘন্টা ২৮ মিনিট ২৩ সেকেন্ড । চাঁদের রং হয়ে যাবে প্রায় রক্তের মতো লাল । তাই তার নাম ব্লাড মুন বা বিভার মুন । এই শতাব্দীতে আর এতটা সময় ধরে খণ্ডগ্রাস এর ব্লাড মুন দেখা সম্ভব হবে না ।
এটাই এ বছরের দ্বিতীয় ও সর্বশেষ চন্দ্রগ্রহণ । প্রথমটি হয়েছিল গত ২৬ মে এ বছরে সূর্যগ্রহণও হওয়ার কথা দুটি । একটি হয়ে গিয়েছে গত জানুয়ারিতে । দ্বিতীয় টি হবে ডিসেম্বরের ১৪ তারিখে ।
৫৮০ বছরে দীর্ঘতম খণ্ডগ্রাসে ব্লাডমুন
আমেরিকার ইন্ডিয়ানায় বাটলার বিশ্ববিদ্যালয়ের হলকোম্ব অবজারভেটরি ও নাসা জানিয়েছে, ৫৮০ বছরের মধ্যে দীর্ঘতম খণ্ডগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ শুক্রবার দেখা যাবে চীন-জাপান উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, হংকং,মঙ্গোলিয়া পূর্ব এশিয়ায় । এছাড়া অস্ট্রেলিয়া উত্তর ইউরোপের উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় । প্রশান্ত মহাসাগর ও লাগোয়া দেশগুলিতেও। খণ্ডগ্রাস মুহূর্তে পৌঁছাবে ভারতীয় সময় শুক্রবার দুপুর দুটো ৩০ মিনিটে । এই শতাব্দীতে এর চেয়ে বেশি সময় ধরে খন্ড গ্রাস চন্দ্রগ্রহণ আর হবে না । তবে ভারত থেকে এই গ্রহণ দেখা যাবে না ।শুধুমাত্র শেষের দিকটা দেখা যাবে অরুণাচল প্রদেশ । উত্তর ভারতের কিছু কিছু জায়গা থেকে বাংলাদেশের একদম উত্তর থেকে একদম শেষ সময়টুকু ।
যেন পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ হবে
পূর্ণিমার চাঁদের আকারের চেয়ে কিছুটা ছোট হবে । শুক্রবারে এই চাঁদ পৃথিবীর সেই চাঁদের ৯৭.৪ দশমিক ৪ শতাংশ ঢাকা পড়ে যাবে । ফলে আক্ষরিক অর্থে খণ্ডগ্রাস হলেও শুক্রবার চন্দ্রগ্রহণ অনেকটা যেন পূর্ণ গ্রাসই । শুক্রবারে পূর্ণিমার চাঁদের রং অবশ্য পুরোপুরি লাল হবে না । পৃথিবীর ছায়া ঢাকতে পারবেনা বলে চাঁদের মাত্র ৩% আলোকিত হবে সূর্যলোকে । প্রদক্ষিণের সময় ও পথে পূর্ণিমার চাঁদ পৃথিবীর মধ্যে পুরোপুরি ঢুকে গেলেই হয় পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ ।
পূর্ণিমায় হয় না গ্রহণ?
প্রতিমাসে অমাবস্যার চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে থাকে । চাঁদের এক পিঠে যখন সূর্যের আলো পড়ে তখন পৃথিবীর দিকে থাকা চাঁদের অন্য পাশে আলো পৌঁছায় না । তাই পৃথিবী থেকে দেখা যায় না অমাবস্যার চাঁদ । প্রদক্ষিণ করে সেই চাঁদ পৃথিবীর অন্য দিকে গেলে তা পূর্ণিমার চাঁদ হয়ে ওঠে । পৃথিবীর সেই দিকে তখন সূর্যের আলো পৌঁছায় না । চাঁদ সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে দিতে পারলে হয় পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ । না পারলেও হয় আংশিক সূর্যগ্রহণ বা সূর্যের বলয় গ্রাস । কিন্তু চাঁদ তার কক্ষপথে একটু ঝুঁকে থাকে বলে অমাবস্যার চাঁদ সবসময় সূর্যের মুখ পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ঢেকে দিতে পারেনা । তাই অমাবস্যা সাধারণত আমরা চাঁদ দেখতে পাই না । কিন্তু পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ বা সূর্যের বলয় গ্রাস কিন্তু প্রতি মাসে দেখা যায়না । বছরে সূর্য গ্রহণ হয় দুইটি থেকে তিনটি সর্বাধিক হতে পারে পাঁচটি । যেমনটা শেষবার ১৯৩৫ সালে আবার হবে ২২০৬ সালে । একটি শতাব্দীতে গড়ে সূর্য গ্রহণ হয় ৬৬ টি । কক্ষপথের চাঁদ কিছুটা হেলে থাকায় প্রতি পূর্ণিমায় দেখা যায়না চন্দ্রগ্রহণ । পূর্ণগ্রাস আংশিক কোনটাই নয় অমাবস্যা থেকে পূর্ণিমা পৌঁছাতে পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করতে চাঁদের সাড়ে ২৯ দিন সময় লাগলেও তাই বছরে সাধারণত গড় এর দুটি বা তিনটি চন্দ্রগ্রহণ হয় । কোন বছরে একটিও আবার হয় না ।
আরও পড়ুন: UFO: উড়ন্ত চাকি ভিন্গ্রহীদের যান? নাকি শত্রু দেশের নজরদারি? তদন্তে নামছে পেন্টাগন, Pentagon
কেন এ বারের খণ্ডগ্রাসের ব্লাড মুন?
এর মূল কারণ পৃথিবীতে চাঁদের প্রদক্ষিণ করার পথে আকার । পৃথিবী কে একটি উপবৃত্তাকার কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে চাঁদ । ফলে প্রদক্ষিণের পথে কখনো একেবারে কাছে আবার কখনো একেবারে দূরে চলে যায় চাঁদ । কাছে এলে পূর্ণিমার চাঁদের আকার বড় হয় দূরে গেলে হয়ে যায় ছোট । শুক্রবার পূর্ণিমার চাঁদ প্রদক্ষিণ পথে পৃথিবী থেকে রয়েছে দূরে । এ বছরের সবথেকে দূরে তাই শুক্রবার পূর্ণিমার চাঁদ হবে বছরের সবথেকে ছোট আকারের । পৃথিবী থেকে এ বছরে সবথেকে দূরে রয়েছে বলে শুক্রবারে চাঁদের উপর পৃথিবীর যে ছায়া পড়বে তা হবে অনেকটাই বড় । সে ছায়ার কবল থেকে বেরিয়ে আসতে শুক্রবারে পূর্ণিমার খণ্ডগ্রাস গ্রহণের চাঁদের অনেক বেশি সময় লাগবে । তিন ঘন্টা ২৮ মিনিট ২৩ সেকেন্ড । যতটা সময় এই শতাব্দীতে আর কোন চাঁদের খণ্ডগ্রাসের ক্ষেত্রে লাগবে না । গত ৫৮০ বছরেও লাগেনি এতটা সময় ।
আরও পড়ুন: চীন স্থান না দেওয়ায় বিটকয়েন বিভিন্ন দেশের বাতাসে বিষ ছড়াচ্ছে,জানাল গবেষণায়
চাঁদের রং লাল হবে রক্তের মতো
সূর্যালোকের সাদা আলোর মধ্যে রয়েছে লাল থেকে নীল সাতটি রঙের বর্ণালী । এদের মধ্যে তরঙ্গ দৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম নীল আলোর যার মধ্যে রয়েছে দুটি রং বেগুনি আর ইন্ডিয়ার । তরঙ্গ দৈর্ঘ্য সব থেকে বেশি লাল আলোর তার মধ্যেও রয়েছে দুটি রং লাল কমলা । শুক্রবার চাঁদের পিঠে পড়া সূর্যালোক ভূপৃষ্ঠে পৌঁছানোর পথে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল তাকে ছেঁকে নেবে ছাঁকনির মতো । সূর্যালোকের কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের নীল রঙের আলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের অণুগুলিকে ধাক্কা মেরে বিচ্ছুরিত হয়ে যাবে । আর লাল ও কমলা রঙের আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি বলে তা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের অনুকে তুলনায় অনেক কম সংখ্যায় ধাক্কা মেরে বায়ুমণ্ডলের ঢুকে পড়তে পারবে । ভূপৃষ্ঠের অনেক বেশি অনেক কাছাকাছি তাই খণ্ডগ্রাস এর চাঁদকে আমরা লাল রঙের বেশি দেখতে পাওয়া যায় । সেই চাঁদ হয়ে উঠবে ব্লাড চন্দ্রপৃষ্ঠের অন্তত ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ চন্দ্রপৃষ্ঠের বাকি 2.6% কিন্তু পৃথিবীর ছায়া পরবেনা সেখানে সূর্যের আলো পড়বে ফলে শুক্রবারে সেই অংশের চাঁদের রং কিন্তু লালচে হবে না । বাকি ৯৭ দশমিক ৪ শতাংশ চাঁদ লালচে দেখায় । বন্ধুরা কেমন লাগলো আশা করি ভালো লেগেছে এবং কাজে লেগেছে সঙ্গে থাকবেন । লাইক শেয়ার অবশ্যই করবেন আর কমেন্ট বক্সে আপনার গুরুত্বপূর্ণ মতামত জানাবেন ।